বাংলাদেশ পিপলস পার্টি-বপিপি’র গঠন ও ঘোষনা
২০১৮ সালের ২৭ জুলাই জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক জনাকীর্ন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পিপলস পার্টি-বিপিপি’র গঠনের ঘোষনা দেয়া হয়। নবগঠিত এই পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিশিষ্ট রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী মোঃ বাবুল সরদার চাখারী এবং মহাসচিব হিসাবে নিযুক্ত হন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি-পিডিপি’র মহাসচিব এহসানুল হক সেলিম এবং ২১ সদস্যের প্রেসিডিয়াম সহ ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষনা দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক, রাষ্ট্রব্যবস্থা, সমাজে সুশাসনওন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দেশপ্রেমিক শক্তিগুলোর একটি একক রাজনৈতিক দলে ঐক্যবদ্দ হওয়ার ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা থেকে বাংলাদেশ পিপলস পার্টি-বিপিপির গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি)-র মৌলিক আদর্শ ৫টি।
১. সুসংহত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ।
২. ইসলামী আদর্শ এবং সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ।
৩. বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ।
৪. উদার গণতন্ত্র।
৫. সামাজিক প্রগতি ও অর্থনৈতিক মুক্তি।
বাংলাদেশ পিপলস পার্টি-বপিপি’র মূলনীতি ১০টি।
১. রাষ্ট্র এবং জাতীয় বৃহৎ স্বার্থে ঐকমত্য পোষণ করা এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা।
২. জাতীয় স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব সুসংহত করা। সকল প্রকার আধিপত্যবাদ ও সম্প্রসারবাদ এবং বিশ্বের সকল জাতির আধিপত্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের সাথে একাত্মতা পোষণ করা।
৩. ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের আদর্শ সংরক্ষণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় বীরের মর্যাদা প্রদান করা।
৪. সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
৫.সামাজিক উন্নতির পূর্বশর্ত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানসহ সকল প্রকার কাঠামোর মূলভিত্তি দৃঢ় করা।
৬.স্বাধীন জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ঢালাও রাষ্ট্রীয়করণের ভ্রান্তনীতির পরিবর্তন করে জাতীয় স্বার্থে জাতীয় পুঁজি বিকাশের পথ উন্মুক্ত করে এবং দেশীয় প্রযুক্তির আধুনিকায়ন করে তা কার্যকর করা।
৭.কৃষিক্ষেত্রে গৃহীত ভূমিসংস্কার নীতির আধুনিকায়ন করে তা বাস্তবায়ন ও কৃষিব্যবস্থা আধুনিকায়নের মাধ্যমে কৃষকের অবস্থার উন্নয়ন ও বিকাশ সাধন করা।
৮.সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতির প্রতি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অবিচল শ্রদ্ধা ও মর্যাদা প্রদর্শন, সমাজ জীবনে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠা, সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা প্রদর্শন এবং তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে স্বাধীনতা প্রদান।
৯.সংখ্যালঘু জাতিসমূহের নিজ নিজ কৃষ্টি ও বৈশিষ্ট্যসমূহ সংরক্ষণ ও তাদের সামাজিক অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণ করা।
১০.বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক সংস্কৃতির বিকাশ সাধন করা। উক্ত মৌলিক আদর্শ ও মূলনীতির আলোকে প্রণীত রাজনৈতিক কর্মসূচির এবং বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি)-র ঘোষণাপত্রে বিবৃত কর্মসূচিসমূহ বাস্তবায়নের দায়িত্ব এই গঠনতন্ত্র মোতাবেক গঠিত কমিটিসমূহের উপর অর্পিত থাকবে।
বাংলাদেশ পিপলস পার্টি-বপিপি’র ঘোষনাপত্র
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উদার গণতন্ত্র, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, সুশাসন, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মানের অঙ্গীকার।
স্বাধীনতার সুদীর্ঘ লড়াই, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন।
গণতন্ত্র
প্রাপ্তবয়ষ্ক সকল নাগরিকের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা গঠিত সরকার রাষ্ট্র দ্বারা পরিচালনা করবে।
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের স্বকীয়তা, আত্মমর্যাদা ও বিশ্বাস বাংলাদেশী জাতীয়বাদের মধ্যে নিহীত।
সুশাসন
সৎ যোগ্য ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বই কেবল একটি দেশে সুশাসন, আইনের শাসন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথ তৈরী করতে পারে।
ধর্মীয় মূল্যবোধ
বর্তমানে দেশে ১৮ কোটি মানুষের বসবাস। তন্মধ্যে ৯০ ভাগ মুসলমান ছাড়াও হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধসহ আরো বিভিন্ন ধর্ম বিশ্বাসীদের অবস্থান বহুকাল পূর্ব থেকে। এদেশের মানুষ বরাবরই ধর্মভীরু ছিল। আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের সমাজ জীবনের প্রাথমিক ও প্রকৃত শিক্ষা হচ্ছে ধর্মীয় শিক্ষা, ধর্মীয় আচার-আচারণ/মানবিক মূলবোধ ও সমাজ ব্যবস্থায়, আমাদের ধর্মের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। সেই আলোকে বাংলাদেশের জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মানে আমাদের ধর্ম এক গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক উপাদান।
জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যে ১০ দফা কর্মসূচি
বাংলাদেশ একটি চমৎকার ভৌগলিক অবস্থানে অবস্থিত। সামুদ্রিক, নদীমাতৃক আবহাওয়ার সংমিশ্রণের দেশ বাংলাদেশ। দক্ষিণে বিশাল সমুদ্র এবং উত্তরের মিঠা পানির প্রবাহে বিধৌত এ দেশের ভূ-পৃষ্ঠকে অত্যন্ত উর্বর করে তুলছে। এ অঞ্চলের আবহাওয়া এবং উর্বর ভূমি আমাদের দেশের অর্থনীতিকে মহিমান্বিত ও চমকপ্রদ করেছে। এদেশের আবহাওয়া ও মাটি কৃষি কাজের জন্য খুবই উপযোগী। আমাদের আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে কৃষি-শিল্পের উন্নয়নের সংমিশ্রণে অর্থাৎ কৃষি, কৃষিজাত শিল্প ও শিল্পকে সমান্তরালভাবে এগিয়ে নিতে হবে। যার মধ্যে আমাদের ১৮ কোটি মানুষের জীবনমান ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং অর্থবহ জাতীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে এগিয়ে নেয়া সম্ভবপর করে তোলা। ২১ শতকের বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) আগামীর দিনগুলির জন্য নিম্ন লিখিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১. দেশের শাসনতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এই কাউন্সিল হবে দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। ৭ সদস্যের সমন্বয়ে এই কাউন্সিল গঠিত হবে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি পদাধিকার বলে এই কাউন্সিলের প্রধান হিসাবে বিবেচিত হইবেন, বাকিরা সদস্য হবেন।
ক) প্রধানমন্ত্রী
খ) বিরোধী দলীয় নেতা
গ) সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি
ঘ) সেনাবাহিনীর প্রধান
ঙ) নৌবাহিনীর প্রধান
চ) বিমানবাহিনীর প্রধান
প্রতিমাসে অন্ততঃ একবার এই জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক হইবে বাধ্যতামূলক।
২.
ক) সরকার মূলতঃ দুইস্তরে বিন্যাস্ত হবে, কেন্দ্রীয় সরকার যা পরিচালিত হবে সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতার নেতৃত্বে।
খ) স্থানীয় সরকার স্থানীয় উন্নয়নের সকল কার্যকলাপ উপজেলা পরিষদ দ্বারা পরিচালিত হইবে। উপজেলা চেয়ারম্যান জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন।
৩. গ্রামীন কাঠামোগত উন্নয়নই জাতীয় সার্বিক উন্নয়নের মূলভিত্তি। সেই কারণেই ইউনিয়ন পরিষদকে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর বাজেটের ৭০% বরাদ্দ দিতে হইবে।
ক) ইউনিয়ন পরিষদ নিজস্ব পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থ দিয়ে ইউনিয়নের উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।
খ) ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে ও তদারকিতে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে।
গ) সার, কীটনাশক ও বীজের চাহিদা নিরূপনসহ কৃষি উপকরণ সরবরাহের দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদের উপর ন্যস্ত থাকিবে।
ঘ) প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদে কৃষি উৎপাদিত পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের একটি কেন্দ্র পালন ইউনিয়ন পরিষদকর্তৃক পরিচালিত হইবে।
ঙ) ইউনিয়ন পরিষদ যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যবস্থাপনার প্রধান দায়িত্ব পালন করবে।
৪. বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও মঙ্গলা সমুদ্রবন্দর আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করিবে। প্রতিবেশী দেশ যাদের সমুদ্রবন্দর নাই বানিজ্যিকভিত্তিতে সেই সকল দেশের বা অঞ্চলের সঙ্গে ট্রানজিট সুবিধা প্রদান করিবে। এই ভাবে জাতীয় স্বার্থে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করিলে রাষ্ট্রের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হইবে।
৫. বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) দেশের সড়ক ও নৌপথের সুষম ব্যবস্থাপনা অগ্রধিকার ভিত্তিতে করিবে। নদী পথে যাতায়াত ও পরিবহন নিরাপদ এবং অর্থনৈতিক ভাবে সাশ্রয়ী। তাই নৌযানের উপর গুরুত্ব দিবে এবং নদীর নাব্যতা বজায় রাখিতে নিয়মিতভাবে নদী খনন কাজের (ড্রেজিং) ব্যবস্থা রাখিবে এবং নৌপথের ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করিবে।
৬. প্রাথমিক পর্যায়ে সকল শিক্ষাকে এককেন্দ্রীক শিক্ষা ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসিবে এবং যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করিবে।
৭. দেশের গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশের জন্য এবং আগামীতে আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে সুষ্ঠু ব্যবস্থা বজায় রাখার জন্য গার্মেন্টস মন্ত্রনালয় প্রতিষ্ঠা করিবে এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের উপর চাপ কমানোর জন্য রংপুর ও দিনাজপুরের মাঝে এবং ফরিদপুর খুলনা ও বরিশালের মাঝে দুটি গার্মেন্টস শিল্পপল্লী গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করিবে।
৮. বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) সকল শিল্পশ্রমিকের নূন্যতম মজুরী ১৮ হাজার টাকা ঘোষণা করিবে।
৯. কৃষক শ্রমিকসহ সকল নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করিবে।
১০. দ্রুত বিদ্যুৎ খাতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ পিপলস পার্টি- বিপিপি বেসরকারী পর্যায়ে ৫০ থেকে ২০০ মেঘাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রকল্প প্রদান করিবে।